মোবাইল ফোন কি ক্যান্সারের অন্যতম কারণ?গবেষণা কি বলছে দেখুন

আমাদের দৈনন্দিন জীবন যাপন ক্রমেই প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়ছে। প্রযুক্তির নিত্যদিনকার ব্যবহার আমাদের জীবনকে যেমন করে তুলছে সহজ, তেমনি ভাবেই ইদানিং আমাদের মনে প্রশ্ন জাগছে এই সকল প্রযুক্তির কোন নেতিবাচক দিক নেই তো?অনেকেই বলছেন বেশি সময় ফোন কানে নিয়ে কথা বললে মস্তিষ্কে ক্যান্সার হতে পারে। পকেটে মোবাইল ফোন রাখলে রেডিয়েশন থেকে শারীরিক ক্ষতিসাধন হতে পারে।
বর্তমান বিশ্বে মোবাইল ফোনের সহজলভ্যতার সাথে পাল্লা দিয়ে এর রেডিয়েশন নিয়ে দুশ্চিন্তাও বাড়ছে।কিন্তু এ ব্যাপারে বিজ্ঞান কী বলছে?আসলেই কি এই রেডিয়েশন আমাদের শরীরে ক্যান্সার সৃষ্টির জন্য দায়ী। আসুন তাহলে জেনে নিই প্রকৃত সত্য কি?
রেডিয়েশন কি?
মোবাইল ফোনে আমরা যখন কথা বলি। তখন মোবাইল ফোন এক বিশেষ ধরনের রেডিয়েশন তৈরি করে, যাকে বলা হয় ইলেকট্রোমেগনেটিক রেডিয়েশন।আসলে আমাদের মনে মোবাইল সম্পর্কে নেতিবাচক প্রশ্নটি আসার কারণ হলো – ‘রেডিয়েশন’ শব্দটি শুনলেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে আসে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী কোন নিউক্লিয়ার স্থাপনার এক্সিডেন্টের ঘটনা।
তাহলে মোবাইল ফোনের তরঙ্গ থেকে মানুষের ক্যান্সার হতে পারে কি? সত্যি কথা বলতে গত কয়েক বছর ধরেই বিজ্ঞানীরা এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছেন।তবে এখন এ সংক্রান্ত সকল প্রশ্নের স্পষ্ট উত্তর এখনো পাওয়া যায়নি।এ ব্যাপারে গবেষণা কি বলছে দেখুন।
গবেষণা কী বলছে?
গত বছর প্রকাশিত আমেরিকান সরকারের একটি গবেষণায় কতগুলো ইঁদুরের উপর খুবই উচ্চমাত্রার সেলফোন রেডিয়েশন প্রয়োগ করা হলে দেখা যায় কিছু পুরুষ ইঁদুরের হৃদপিণ্ডে এক ধরনের টিউমার সৃষ্টি হয়েছে। কিছু পুরুষ ইঁদুরের ব্রেইনেও টিউমার ধরা পড়ে। অবশ্য স্ত্রীবজাতীয় ইঁদুরে এই সমস্যা দেখা যায়নি।এর সাথে যোগসূত্র থাকার ব্যাপারে একটি প্রেস রিলিজও প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি সংস্থা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব এনভায়রোমেন্টাল হেলথ সায়েন্সেস।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি সরকারি সংস্থা এফডিএ এ ব্যাপারে বলছে বর্তমানের সেফটি লিমিট অনুযায়ী সেলফোন থেকে বিকিরিত রেডিওফ্রিকোয়েন্সি এনার্জি মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ বলে এফডিএ বিশ্বাস করে।যদিও এসব ব্যাপারে এখনও গবেষণা চলছে।সেলফোনগুলো থেকে অবশ্যই পরিবেশে রেডিয়েশন হচ্ছে। কিন্তু তার মানে এই না যে এটা একটা পারমাণবিক বোমা থেকে বা এক্সরে মেশিন থেকে প্রাপ্ত রেডিয়েশনের মতো শক্তিশালী।
মোবাইল ফোনের রেডিয়েশন ক্ষতিকর কি?
বিভিন্ন রকম হতে পারে রেডিয়েশন।অ্যামেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে সেলফোনের রেডিয়েশন হচ্ছে রেডিওফ্রিকোয়েন্সি রেডিয়েশন যা মানুষের দেহকোষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে,কিন্তু টিউমার সৃষ্টি করার মতো যথেষ্ট শক্তিশালী নয়। ‘নন-আয়োনাইজিং’ রেডিয়েশন বলে এগুলোকে।যা কোষে ডিএনএ এর রাসায়নিক বন্ধন ভেঙে ক্যান্সার তৈরি করতে সক্ষম নয়।
এ ধরণের আরও কিছু ‘নন-আয়োনাইজিং’ রেডিয়েশন হচ্ছে এফএম রেডিওর তরঙ্গ, মাইক্রোওয়েভ এবং দৃশ্যমান আলো।অ্যামেরিকান ক্যান্সার সোসাইটি আরও বলছে অনেক বেশি মাত্রায় মোবাইল ফোনের তরঙ্গ যদি মানবদেহের সংস্পর্শে আসে, তাহলে এটি শরীরের কোষের উষ্ণতা বাড়িয়ে দিতে পারে। সেইসাথে এটাও বলছে মোবাইল ফোন থেকে বিকিরিত তরঙ্গের শক্তি এতটাই কম, যে তা মানুষের কোষের উষ্ণতা বৃদ্ধি করার জন্য যথেষ্ট নয়।
বিজ্ঞানীরাও এই বিষয়টি নিয়ে এখনো সম্পুর্ন পরিষ্কার নন।শত শত গবেষণা হয়েছে কিন্তু সরাসরি সেলফোন রেডিয়েশনকে মানুষের জন্য ক্যান্সারের কারণ বলে কেউ ১০০% প্রমাণ করতে পারেনি। তবে বিজ্ঞানীরা বরাবরই এর ঝুঁকির ব্যাপারে ইঙ্গিত দিয়েছেন।দিনকে দিন নেটওয়ার্কে পরিবর্তন আসছে।ইঁদুরের ওপর পরিচালিত উপরোক্ত গবেষণা ২জি, ৩জি নেটওয়ার্কের ফ্রিকোয়েন্সি দিয়ে করা হয়েছে।এখন ৪জি ও ৫জি এর যুগ।
তাই সময়ের সাথে মোবাইল ফোনের বিকিরণ মানবদেহে কেমন প্রভাব ফেলে সে ব্যাপারে এখনো কিছু জানা যায়নি।তবে বিজ্ঞানীরা আগাম সতর্কতা হিসেবে পরামর্শ দিয়েছেন মোবাইল ফোনের তরঙ্গ থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকতে।তাই আমাদের অবশ্যই যতটা সম্ভব মোবাইল ব্যবহার কমানো উচিত।তবে খেয়াল রাখা দরকার মোবাইল ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার যেন আমাদের যান্ত্রিক না করে দেয়।