ওড়িশায় অবস্থিত কোনারক মন্দির, একটি বহু প্রচিন সূর্য মন্দির হওয়া সত্ত্বেও সেখানে এখনও কেন পূজা করা হয় না?

ওড়িশা রাজ্যের পুরী জেলার কোণার্ক শহরে অবস্থিত সূর্য মন্দির।মন্দিরটি ১২৫০ খ্রিষ্টাব্দে পূর্ব গঙ্গ রাজবংশের প্রথম নরসিংহদের এটি নির্মাণ করেছিলেন। মন্দির কমপ্লেক্সটি একটি বিশাল রথের আকৃতিতে সূক্ষ্ম কারু কার্যময় পাথরের চাকা, স্তম্ভ ও দেওয়াল সহ তৈরি করা হয়েছে।মন্দিরটি একটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান এবং ভারতে সাতটি বিস্ময়ের বিভিন্ন তালিকাতেও রয়েছে। মন্দিরটি পুরী থেকে ৩৫ কিমি এবং ভুবনেশ্বর থেকে ৬৫ কিমি দূরে অবস্থিত।কোনারক মন্দির একটি বহু প্রচিন সূর্য মন্দির হওয়া সত্ত্বেও সেখানে পূজা করা হয় না। কিন্তু কেন সেই মন্দিরে পুজা করা হয় না,সবার মনে এই প্রশ্নটি আসাই স্বাভাবিক। জেনে নিন কেন ওড়িশা এই মন্দিরে পুজো হয় না।
কোনারক মন্দির হল একটি বহু প্রাচীন সূর্য মন্দির।১২৫০ সালে রাজা নরসিংহদেব নির্মাণ করেন এই মন্দিরটি।এই মন্দিরটি ওড়িশা ও দ্রাবির সংমিশ্রণে ধূসর বেলে পাথর দিয়ে বিশাল রথের আকারে তৈরি হয়েছিল।নরসিংহদেব এই মন্দিরটির নির্মাণ কাজের সময় একটি অদ্ভুত নিয়ম বানিয়েছিলেন। নিয়মটি ছিল যে এই মন্দিরে প্রতিদিন ১২০০ শ্রমিক কাজ করবেন আর ১২ বছরে এই মন্দির নির্মাণ কাজ সমাপ্তি করতে হবে।আর যদি এই ১২০০ শ্রমিকের মধ্যে কোনাে শ্রমিক কম বেশি হলে সবার প্রানদণ্ড হবে।
তারপর নরসিংহদেবের নিয়ম মত এই মন্দিরের কাজ শুরু হয়।কাজ শুরুর পর এক শ্রমিকের স্ত্রী গর্ভবতী হয় কিন্তু সেই শ্রমিকের কাজ ছেড়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না।তারপর সেই শ্রমিকের স্ত্রী একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দিলেও, মন্দিরের কাজ ছেড়ে যেতে পারেন না সেই শ্রমিক। শ্রমিকের পুত্রটির নাম দেন ধর্ম দাস।পরে ধর্ম দাস তার মায়ের কাছে তার পিতার সম্পর্কে চাইলে তার মা তার পিতার সম্পর্কে সব কথা জানায়।তারপর ধর্ম দাস তার পিতার কাছে যান।কিন্তু তখনও ওই মন্দিরের নির্মাণ কাজে সাত দিন বাকি ছিল।
তাই পুত্র আসা সত্ত্বেও ওই শ্রমিকটি নির্মাণ কাজ ছাড়তে পারলেন না।কারন ওই মন্দিরের মঙ্গলঘট তখন স্থাপিত হয়নি। তার পিতার কষ্ট দেখে মঙ্গলঘট নির্মাণে কাজে লেগে পড়েন ধর্ম দাস এবং সফল হয় তাদের কাজ। কিন্তু এতে রাজার নির্দেশ লঙ্ঘন হয়।কারন রাজার নিয়ম ছিল ১২০০ শ্রমিক কাজ করবে,তার কমবেশি হলেই প্রাণদন্ড।তাই ১২০০ শ্রমিকের প্রান বাঁচাতে গিয়ে ধর্ম দাস ওই মন্দিরের চূড়া থেকে আত্মহত্যা করেন।আর এই কারনেই এই মন্দিরে আজও পূজা করা হয় না। সূর্যদেবের মন্দির হওয়া সত্ত্বেও এই মন্দিরে কোনাে বিগ্রোহ নেই। রাত নামলেই নাকি আজও এই মন্দিরের চারপাশে আর্তনাত শােনা যায়।