Nairobi Fly: উত্তরবঙ্গের পর এবার উঃ ২৪ পরগনা, অ্যাসিড পোকার হানায় চামড়া পুড়ল জনপ্রিয় ইউটিউবারের
আতঙ্ক বাড়াচ্ছে অ্যাসিড পোকা! কোভিডের পাশাপাশি উদ্বেগ বাড়াচ্ছে অ্যাসিড পোকা (নাইরোবি ফ্লাই)।

Nairobi Fly: কোভিডের পাশাপাশি উদ্বেগ বাড়াচ্ছে অ্যাসিড পোকা (নাইরোবি ফ্লাই) Nairobi Fly ।উত্তরবঙ্গে এই অ্যাসিড পোকা বেশ নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছে।উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় ও উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের কয়েক জন পড়ুয়া এই পোকার আক্রমণের শিকার হয়েছেন।এই অ্যাসিড পোকার আক্রমণে অসুস্থ হয়ে ইতিমধ্যেই বেশ কয়েক জন তরুণ তরুণীর চিকিৎসা চলছে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রতিদিনই বিষাক্ত প্রকার আনাগোণা শুরু হয়েছে। যার জেরে আতঙ্ক ছড়িয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে। অনেকেই পোকার হানায় অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। অনেকে হস্টেল ছেড়ে চলেও গিয়েছেন। পোকার আক্রমণে ব্যতিব্যস্ত সাধারণ পড়ুয়ারা। মশারি টাঙিয়েও লাভ হচ্ছে না। পোকা মশারির ফুটো দিয়েও ঢুকে পড়ছে বিছানায় এতটাই ছোট। যা নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে হস্টেলের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে।
সন্ধ্যা হলেই আতঙ্ক বাড়ছে। (Nairobi Fly) পোকাগুলি যে কোথা থেকে ঘরে ঢুকছে কেউ বুঝতে পারছে না। যেখানে কামড়াচ্ছে সঙ্গে সঙ্গে সেই অংশ পুড়ে গিয়ে ফোসকা পরে যাচ্ছে। তার সঙ্গে অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে।আতঙ্কে ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকজন হস্টেল ছেড়ে চলে গিয়েছেন। খবর ছড়িয়ে পরতেই অনেকে হস্টেলে ফিরতে চাইছেন না।শিলিগুড়ির পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং, কার্শিয়াঙেও অ্যাসিড পোকার উপদ্রব বেড়েছে।
এবার এই পোকার দেখা মিলল উত্তর ২৪ পরগনা। পোকা গায়ে বসতেই চামড়া পুড়ল অশোকনগরের বাসিন্দা নিহার বাগচীর। সোশ্যাল মিডিয়ায় কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে বেশ পরিচিত নিহার ওরফে ‘মাঞ্চু দাদা’।গত ৩০ জুন সন্ধেয় নিহার বাইক চালিয়ে হাবড়ার জয়গাছির দিকে যাচ্ছিলেন। সেই সময় আচমকা তাঁর চোখের কোনায় একটি পোকা (Nairobi Fly) এসে পড়ে। তখনই পোকাটিকে তিনি মেরে দেন।
কিন্তু তখনও নিহার বুঝতে পারেনি, ওইটাই সেই নাইরোবি ফ্লাই বা অ্যাসিড পোকা। সেই সময় থেকেই চোখের কোনায়, মুখে জ্বালা করছিল যুবকের। বিষয়টিকে অতটা গুরুত্ব না দিয়ে তিনি বাড়ি ফেরেন। রাতেই জ্বালাটা কিছুটা বাড়ে, তবুও ঘুমিয়ে পড়েছিলেন নিহার।হঠাৎই মাঝরাতে ঘুম ভাঙলে তিনি দেখেন, মুখ বীভৎস ফুলেছে। এরপর সকালে বিষয়টি জানতে ইন্টারনেটে সার্চ শুরু করেন। তখন তিনি দেখতে পান নাইরোবি ফ্লাইয়ের ছবি।চোখের কোনায় বসার পর যেই পোকাটিকে নিহার মেরেছিলেন, তার সঙ্গে হুবহু মিলে যায় ওই অ্যাসিড পোকার(Nairobi Fly)।
এরপর আর দেরি না করে সে চোখের ডাক্তারের কাছে যান তিনি। চিকিৎসকের পরামর্শ ওষুধ খাওয়া শুরু করেন। একদিন পর তিনি দেখেন মুখের একটা অংশ পুড়ে যাওয়ার মত হয়ে গিয়েছে। তারপর আবার তিনি আবার চিকিৎসার সঙ্গে যোগাযোগ করেন।এখন অনেকটাই সুস্থ নিহার। তাঁর জ্বর বমি বা অন্য কোন লক্ষণ দেখা যায়নি। তবে খাবারের প্রতি এখনও অনীহা রয়েছে।
এ বিষয়ে নিহার বাগচী বলেন, “পোকাটিকে মারার পরে হাত শরীরের যে যে জায়গায় লেগেছিল, এই জায়গা গুলি সংক্রমিত হয়েছে। এই পোকা শরীরে এসে বসলে মারবেন না। মারার পরে পোকার শরীর থেকে বের হওয়া রস যে যে জায়গায় লাগে, তা সংক্রমিত হয়। যদি ভুলবশত মেরেও ফেলা হয় তাহলে সঙ্গে সঙ্গে জল দিয়ে ধুয়ে নেওয়া উচিত। তবে এই নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সতর্কতা অবলম্বন করলেই হবে। আক্রান্ত হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
কী এই অ্যাসিড পোকা?
চিকিৎসকদের সূত্রে খবর, এই পোকা (Nairobi Fly) এক ধরনের মাছি। যাকে নাইরোবি মাছিও বলা হয়ে থাকে। এই পোকার কামড়ে একাধিক মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। নাইরোবি মাছির থেকে টক্সিন নামে এক ধরনের ক্ষতিকারক পদার্থ বেরোয়। আর তাতেই মানুষের চামড়ায় ফোসকা পড়ে যায়। পোকাটি কামড়ে হুল ফোটায়। পোকাটির শরীরে ‘পিডেরিন’ নামক বিষাক্ত ও ক্ষতিকর পদার্থ থাকে। যা মানুষের ত্বক এবং কোষের মারাত্মক ক্ষতি করে।
অ্যাসিড পোকার (Nairobi Fly) বৈশিষ্ট্য কী?
এই অ্যাসিড পোকার রঙ লাল আর কালো। মাথার দিকটা কালো হয় আর পেট হয় লাল। ছোট্ট এই পোকার দৈর্ঘ্য ৬ থেকে ১০ মিলিমিটার। অ্যাসিড পোকা কামড়ালে ক্ষতস্থানে জ্বালাপোড়া, ব্যথা, বমিভাব, মাথাব্যথা, জ্বর হতে পারে। পোকাটি এতটাই ক্ষতিকর যে, পোকাটির সংস্পর্শে যদি কারও চোখে ক্ষত হয় সেই ব্যক্তি দৃষ্টিশক্তিও হারাতে পারেন।
অ্যাসিড পোকার উপসর্গ কী?
পোকা (Nairobi Fly) কামড়ালে যে ক্ষত সৃষ্টি হয় সেখান থেকে শরীরের অন্য অংশে সেই অ্যাসিড লাগলে সেখানে এক ধরনের ফোসকা বা ক্ষত তৈরি হতে পারে। পাশাপাশি এই পোকা কামড়ালে জ্বালা-পোড়া, ব্যথা, বমি ভাব মাথা ব্যথা এমনকী জ্বর হতে পারে পোকাটি এতটাই ক্ষতি করে সেটির সংস্পর্শে যদি কারও চোখে ক্ষতি হয় সেই ব্যক্তির দৃষ্টিশক্তি হারাতে পারেন।
কোথায় এবং কখন আক্রমণ করে এই পোকা?
এই পোকাটি মূলত বর্ষাকালেই বেশি দেখা যায়। জলা জমি জলা এলাকা ডোবা, ধানক্ষেত এ সমস্ত এলাকায় বেশি দেখা যায়। পোকাটি ঘরের আলোয় আকৃষ্ট হয়ে ঘরের দিকে ছুটে আসে। সে কারণে জনবহুল এলাকায় বাড়িতে ঢুকে পড়তে দেখা যায়। কীটনাশক ছড়িয়ে এই পোকাটি মারা যায় না। এই পোকা মারতে হলে আগুনে পুড়িয়ে বা অক্সিজেন নষ্ট করে মেরে ফেলতে হবে। যেটা বাস্তবে খুবই কঠিন।
অ্যাসিড পোকা থেকে বাঁচতে কী উদ্যোগ নেবেন?
বাড়ির চারিদিক ও জলাধার পরিষ্কার-পরিচ্ছন রাখা, সন্ধ্যের আগে বাড়ির দরজা, জানালা বন্ধ রাখা, ঘরে সাদা আলোর পরিবর্তে হলুদ আলো ব্যবহার করতে হবে। ঘুমোনোর সময় মশারি টাঙানো এবং আলো নিভিয়ে দেওয়া, বিছানার চাদর, বালিশ, তোষক পরিষ্কার রাখতে হবে (Nairobi Fly)।