Swasthya Sathi – পশ্চিমবঙ্গের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষের চিকিৎসায় আর্থিক সহায়তার জন্য রাজ্য সরকার চালু করেছিল স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্প। এবার সেই প্রকল্পেই এমন কড়া নিয়ম আনা হলো যাতে সুবিধা পাওয়া বন্ধ হয়ে গেল বহু মানুষের। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এবং বিশেষ অ্যাপের মাধ্যমে প্রকল্পের কার্যকারিতা আরও স্বচ্ছ ও নির্ভরযোগ্য করতে একগুচ্ছ নতুন নিয়ম চালু করা হয়েছে।
রাজ্যের স্বাস্থ্যদপ্তর জানিয়েছে, এই নিয়মগুলি নার্সিংহোম এবং হাসপাতালগুলিতে ভুয়ো দাবির প্রবণতা কমাবে এবং প্রকৃত সুবিধাভোগীদের সঠিক পরিষেবা নিশ্চিত করবে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, রোগীকে হাসপাতালে ভরতির মুহূর্ত থেকে শুরু করে চিকিৎসার প্রতিটি ধাপে নির্দিষ্ট অ্যাপের মাধ্যমে ছবি, ভিডিও এবং জিপিএস লোকেশন স্বাস্থ্যভবনে পাঠাতে হবে।
Swasthya Sathi কার্ডে নতুন নিয়ম।
অপারেশন, পরীক্ষা-নিরীক্ষা, এমনকি রোগী ছুটি নেওয়ার সময়ও এই পদ্ধতি বাধ্যতামূলক। হাসপাতালের ৫০ মিটার ব্যাসার্ধের বাইরে অ্যাপ কাজ করবে না, যা ভুয়ো তথ্য প্রদানকে অসম্ভব করবে। এছাড়া, আপলোড করা তথ্য যাচাই করার জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবস্থার ব্যবহার চালু হয়েছে। ছবি বা ভিডিও একবার আপলোড হলে তা আর সম্পাদনা করা যাবে না। এর ফলে কোনো ভুয়ো দাবি করা হলে তা সহজেই চিহ্নিত হবে।
যদি কোনো হাসপাতাল বা নার্সিংহোম জালিয়াতি করতে চেষ্টা করে, তবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদেরও দায়ী করা হবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে (Swasthya Sathi) এই নতুন নিয়ম জালিয়াতি হ্রাস করতে বড় ভূমিকা পালন করবে। গত কয়েক বছরে বহু বেসরকারি হাসপাতাল এবং নার্সিংহোম এই প্রকল্পের অধীনে ভুয়ো বিল তৈরি করে সরকারের কাছ থেকে টাকা আদায় করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্বাস্থ্যদপ্তরের নতুন নিয়মে এই প্রবণতা রোধ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। একই নিয়ম কার্যকর হয়েছে ডায়ালিসিস, কেমোথেরাপি এবং অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার ক্ষেত্রেও। পরীক্ষার শুরু ও শেষে জিপিএস অন করে অ্যাপ চালু এবং বন্ধ করার নিয়মও চালু করা হয়েছে। যদি কোনো হাসপাতাল বা নার্সিংহোম এই নিয়ম ভঙ্গ করে, তবে তাদের মোটা অঙ্কের জরিমানা এবং প্রকল্পের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হবে।
রাজ্য সরকারের এই পদক্ষেপে সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। অনেকেই এই নতুন নিয়মের প্রশংসা করছেন। তাদের মতে, এতে প্রকল্পের স্বচ্ছতা বাড়বে এবং প্রকৃত প্রাপকরা সঠিক পরিষেবা পাবেন। তবে কিছু বেসরকারি হাসপাতাল এবং নার্সিংহোমের পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠেছে, এই নিয়মগুলি অতিরিক্ত কঠিন এবং বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে।
তবুও স্বাস্থ্যদপ্তর বলেছে, এই নিয়ম চালুর মূল উদ্দেশ্য হলো সরকারি প্রকল্পের অপব্যবহার বন্ধ করা। নতুন নিয়ম কার্যকর করার আগে বিভিন্ন হাসপাতালকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে এবং অ্যাপ ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত নির্দেশিকা প্রদান করা হয়েছে।