Free Ration – ভারতবর্ষে ২০২০ সালে করোনার ঢেউ আছড়ে পড়ার কারনে দেশজুড়ে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছিল, এর ফলে দেশের জনগণ কর্মহীন হয়ে পরেছিলেন। কাজকর্ম না থাকায় দরিদ্র ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের কোটি কোটি মানুষ কী করবেন তা ভেবে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন। দরিদ্র ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারগুলির না খেয়ে দিন যাপনের অবস্থা তৈরি হয়। তাই সেই সময় দেশের জনসাধারণের কথা ভেবে সরকার বিনামুল্যে রেশন (Free Ration) ব্যবস্থা চালু করেন। খাদ্য সঙ্কটের মোকাবিলা করার জন্য দেশের প্রতিটি মানুষকে বিনামূল্যে চাল-আটা দেওয়া হয়।
রেশন দোকানের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকারের দেওয়া বিনামূল্যের চাল-ডাল লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছে। দেশের ৮০ কোটি মানুষ উপকৃত হয়েছেন। কেন্দ্র তার নিজের মতো করে দাম ও ভর্তুকি দিয়ে রেশন দেয়। বিভিন্ন রাজ্য সরকারও নিজের রাজ্যের মানুষের প্রয়োজন বুঝে এই রেশন ব্যবস্থার মাধ্যমে কোনও সময় ভর্তুকিতে চাল বা গম, আবার কখনও অত্যন্ত কম মূল্যে অতিরিক্ত খাদ্যশস্য দিয়ে থাকে। দরিদ্র সীমার নিচে থাকা মানুষেরা রাজ্য সরকারগুলির এই ধরনের প্রকল্পের জেরেই দুবেলা দুমুঠো পেট ভর্তি করে খাবার খেতে পারে।
তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রেশন ব্যবস্থা এবং রেশন কার্ডের অনেক পরিবর্তন এসেছে আবার বহু নিয়মেরও পরিবর্তন হয়েছে। ফের একবার রেশন (Free Ration) ব্যবস্থা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিলেন কেন্দ্রের মোদি সরকার। কেন্দ্র সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে দেশের দরিদ্র মানুষগুলোর মাথা খারাপ করে দিতে পারে। এফসিআই- এর খাদ্যশস্য সরবরাহ নিয়েই সম্প্রতি একটি নীতির পরিবর্তন করেছে কেন্দ্র। আর তাতেই সাধারণ মানুষের পাশাপাশি রাজ্যগুলোর মাথায় হাত পড়েছে।
কেন্দ্রীয় সরকার Free Ration নিয়মে কি পরিবর্তন করেছে?
কেন্দ্রীয় সরকার সম্প্রতি তাদের ওপেন মার্কেট সেলস স্কিম ( OMSS)-এ পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। খোলা বাজারে চাল ও আটার দাম স্বাভাবিক রাখতেই কেন্দ্র এই পরিবর্তন করেছে। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের ফলে রাজ্যের গরিব মানুষকে বিনামূল্যে (Free Ration) অতিরিক্ত খাদ্য শষ্য সরবরাহ করতে হলে রাজ্যগুলিকেও এবার এফসিআই-এর ই-টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে হবে। তারা আর আগের মত নিজেদের চাহিদা অনুযায়ী টাকা দিয়ে এফসিআই থেকে সরাসরি খাদ্যশস্য পাবে না। বেসরকারি সংস্থা বা ব্যবসায়ীরা এফসিআই থেকে চাল গম কেনার সময় এই ই-টেন্ডার ব্যবস্থার মাধ্যমেই কিনে থাকে।
কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের কারণ।
নিয়মে পরিবর্তন করার বিষয়ে কেন্দ্র যুক্তি দিয়েছে রাজ্যগুলি ইচ্ছেমতো ই-টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অংশ না নিয়ে সরাসরি এফসিআই থেকে খাদ্যশস্য নিয়ে নিলে খোলা বাজারে চাল-আটার দামে প্রভাব পড়ে। তাই খোলা বাজারে যাতে চাল-আটার দাম নিয়ন্ত্রণে থাকে তার জন্যই এমন নীতি নেওয়া হয়েছে।
নতুন Free Ration নিয়মের ফলে রাজ্যগুলির কি সমস্যা হতে চলেছে?
অতীতের সুবিধে বদলে যাওয়ায় রাজ্যগুলিও বুঝতে পারছে না রাজ্যবাসীর জন্য চালু করা বিনামূল্যের (Free Ration) খাদ্যশস্যের প্রকল্পগুলো শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়িত করা যাবে কিনা। কারণ ই-টেন্ডার প্রক্রিয়ায় রাজ্যগুলির ভাগে কতটা খাদ্যশস্য শেষ পর্যন্ত জুটবে তা নিশ্চিত নয়।
ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া বা FCI কেন্দ্রীয় খাদ্য সরবরাহ মন্ত্রকের অধীনস্থ সংস্থা হলেও তারা রাজ্য সরকারগুলোকেও চাহিদা মতো চাল-গম সরবরাহ করে থাকে। কোনও প্রাকৃতিক বিপর্যয় বা রেশনে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ অনুযায়ী রাজ্যগুলির যা প্রাপ্য সেটা এফসিআই বিনামূল্যেই দেয়। তবে এর বাইরে নিজের রাজ্যের মানুষকে বিশেষ সুবিধা দিতে কোনও রাজ্য সরকারের যদি অতিরিক্ত খাদ্যশস্যের প্রয়োজন থাকে তবে সেটা টাকার বিনিময়ে এফসিআই থেকে কিনতে হয়। যদিও এফসিআই অনেকটা কম দামে রাজ্য সরকারগুলোকে এই অতিরিক্ত খাদ্যশস্য বিক্রি করে থাকে।
কেন্দ্রের এই নতুন নীতির জেরে কর্নাটকের দরিদ্র বাসিন্দারা সমস্যায় পড়তে চলেছে?
কর্ণাটকে কংগ্রেস ক্ষমতায় এসে বিনামূল্যে (Free Ration) খাদ্যশস্য সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু কংগ্রেস শেষ পর্যন্ত এই প্রতিশ্রুতি রাখতে পারবে কিনা সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। কারন কর্নাটকের দরিদ্র সীমার নিচে থাকা বাসিন্দাদের বিনামূল্যে খাদ্যশস্য দেওয়ার জন্য সরকার এফসিআই-এর কাছে কুইন্টাল পিছু ৩,৪০০ টাকা দরে ১৩,৮১৯ টন চাল চেয়েছিল। কিন্তু কেন্দ্রের এই নতুন নীতির জেরে এফসিআই তা প্রত্যাখ্যান করেছে।
কর্নাটকের কংগ্রেস সরকার অভিযোগ করেছে তাদের রাজ্যের গরিব মানুষের স্বার্থে নেওয়ার নীতিতে বাধা দেওয়ার জন্যই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও দেশের বেশ কিছু বিরোধী দল কেন্দ্রীয় খাদ্য সরবরাহ মন্ত্রকের এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছেন।
আরও পড়ুন – Adhar card update – আধার আপডেট কাদের করতে হবে, আর কাদের করতে হবে না ? বিস্তারিত জেনে নিন।