Primary TET scam: গত বুধবার প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ কে আগামী দশ দিনের মধ্যে প্রাথমিকের ৪২ হাজার ৯৪৯ জন প্রার্থীর প্যানেল প্রকাশ করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। ২০১৪ সালে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের জন্য যে টেট পরীক্ষাটি হয়েছিল ওই পরীক্ষার মাধ্যমে যারা চাকরি পেয়েছিল তাদের বেশিরভাগজনই অনিয়মের ভিত্তিতে চাকরি পেয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। আর এর জন্য হাইকোর্টে মামলা দায়ের করা হয়। এবার ওই সমস্ত প্রার্থীদের প্যানেল প্রকাশ করার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
২০১৪ সালে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের জন্য যে টেট পরীক্ষা হয়েছিল ওই পরীক্ষার মাধ্যমে প্রায় ১ লক্ষ ২৫ হাজার প্রার্থী উত্তীর্ণ হয়েছিল। ২০১৬ সাল থেকে এই প্রার্থীদের নিয়োগ শুরু হয়। প্রায় ৪২ হাজার ৯৪৯ জনকে চাকরিও দেওয়া হয়েছিল। হঠাৎ ২০২২ সালে ওই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় একাধিক ত্রুটি রয়েছে বলে অভিযোগ করে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন প্রিয়াঙ্কা নস্কর সহ ১৪০ জন চাকরির প্রার্থী।
চাকরি পাওয়া ৪২ হাজার ৯৪৯ জন প্রার্থীর মধ্যে ৩২ হাজার জনপ্রার্থী অপ্রশিক্ষিত বলে অভিযোগ করা হয়। ওই প্রার্থীদের নিয়োগে একাধিক অনিয়ম রয়েছে বলেও জানা যায়। এমনকি সঠিকভাবে ইন্টারভিউ এবং অপটিটিউড টেস্ট না দিয়েই তারা চাকরি পেয়েছে বলে খবর পাওয়া গিয়েছিল। ওই মামলার বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় কয়েকজন পরীক্ষার্থী এবং পরীক্ষকের ইন্টারভিউ এর বয়ান রেকর্ড করেন। এর ফলে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণ হয়।
গত বছরের ১২ ই মে এই নিয়োগের প্রক্রিয়ায় অসংগতির কথা উল্লেখ করে ওই ৩২ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়। অবশ্য পরে বিচারক জানান যে পরের চার মাস ওই ৩২ হাজার শিক্ষকরা পার্শ্ব শিক্ষক এর মতো বেতন পাবেন, এর পাশাপাশি প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আগামী তিন মাসের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়ার সম্পন্ন করতে হবে। আর ওই নিয়োগে অংশ নিতে পারবে ওই ৩২ হাজার চাকরীচ্যুত শিক্ষকরা। আর যোগ্যতার ভিত্তিতেই নিয়োগ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এই রায়ের ফলে ৩২ হাজার জন চাকরিচ্যুত শিক্ষকরা যেমন এই নিয়োগে অংশগ্রহণ করতে পারবে তেমনি ২০১৪ সালে যারা টেট পরীক্ষায় পাশ করেছিল তারাও নিয়োগে অংশগ্রহণ করতে পারবে। এরপর ওই এক লক্ষের বেশি প্রার্থীদেরকে নিয়ে চাকরির প্রক্রিয়া চালানোর ব্যবস্থা করতে বাধ্য হয় পর্ষদ। এই মামলার রায়কে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ এবং চাকরিচ্যুত প্রার্থীদের একাংশ।
এই মামলার রায় অনুসারে গত ১৯শে মে বিচারপতি সুব্রত তালুকদার এবং বিচারপতির সুপ্রতিম ভট্টাচার্যের একক বেঞ্চে চাকরি বাতিলের নির্দেশের উপর স্থগিতাদের জারি করা হয়। ডিভিশন বেঞ্চ থেকে রায় দেওয়া হয়েছে আপাতত ওই ৩২ হাজার শিক্ষকের চাকরি বাতিল হচ্ছে না তবে নতুন ভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ওই প্রার্থীদের সফল হতে হবে তবে তাদের চাকরি বাঁচবে না হলে নয়। এরপর মৌটুসী রায় সহ কয়েকজন চাকরির প্রার্থীদের দাবি হল যে তারাও চাকরি পাবার যোগ্য ছিল কিন্তু মেধা তালিকা স্পষ্ট না হওয়ায় নিয়োগ পায়নি।
এই জন্য তারা টেট উত্তীর্ণদের প্যানেল প্রকাশের দাবি জানিয়ে হাইকোর্টে পৃথক একটি মামলা দায়ের করেছে। মামলাকারিরা জানিয়েছে যে টেট উত্তীর্ণ প্রার্থীদের প্যানেলে যেন সংশ্লিষ্ট জেলা বিষয়ভিত্তিক নম্বর এবং প্রার্থীদের নাম বিস্তারিতভাবে প্রকাশ করা হয়। ওই মামলার পরিপেক্ষিতে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় পর্ষদ কে নির্দেশ দিয়েছেন যে ৪২ হাজার ৯৪৯ জন চাকরি প্রাপ্ত প্রার্থীদের সম্পূর্ণ তালিকা দশ দিনের মধ্যে প্রকাশ করতে হবে। পর্ষদের তরফ থেকে জানানো হয়েছে যে প্যানেল আগেই আদালতের নির্দেশে প্রকাশ করা হয়ে গিয়েছে। এরপর বিচারপতি পর্ষদ কে ওই প্যানেলের হার্ট এবং সফট কপি আদালতে জমা দিতে বলেছে।