ভারতবর্ষ কৃষি প্রধান দেশ। এই দেশের অধিকাংশ মানুষ কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। এক কথায় বাঙালি চাষীদের টাকা রোজগার বা আয় করার মূল উৎস হল কৃষিকাজ। কৃষকরা বিভিন্ন মরশুমে বিভিন্ন ধরনের ফসলের চাষ করেন। কৃষিকাজের ক্ষেত্রে বৃষ্টিপাত অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় বৃষ্টির পরিমাণ ভিন্ন ভিন্ন হয়। আবার অতি বৃষ্টি কিংবা কম বৃষ্টি উভয়ের কারণেই কৃষকদের ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
চাষ বাস করার পর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারনে যদি কৃষকদের ফসল নষ্ট হয়ে যায় তাহলে তাদের টাকা রোজগার করার পথ বন্ধ হয়ে যায়। এমন অনেক চাষী আছেন যারা ব্যাংকের থেকে লোন নিয়েও জমিতে ফসল ফলান।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারনে ফসল নষ্ট হয়ে গেলে ব্যাংকের লোন শোধ করতে পারেন না অনেক চাষি। ফসল নষ্ট হওয়ার কারনে তারা একদম ভেঙে পড়েন। এরফলে অধিকাংশ কৃষকই যথেষ্ট ক্ষতির সম্মুখীন হন। শুধু তাই নয় কোন কোন কৃষক নিরুপায় হয়ে আত্মহত্যার পথও বেছে নেন।
তবে এবার কৃষকদের জন্য দারুন সুখবর রয়েছে। কৃষকরা তাদের রোপণ করা ফসলের বীমা করলে, ফসল নষ্ট হলে ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়ে যাবেন। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার একাধিক জনকল্যাণমুলক প্রকল্প চালু করলেও এই প্রকল্পের সুবিধা কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার দেয় না। এই বীমার সুবিধা প্রদান করেন Agricultural Insurance Company of India Limited (AICIL)। এই কোম্পানির পক্ষ থেকে নষ্ট হয়ে যাওয়া ফসলের জন্য ক্ষতিপূরণ প্রদান করে থাকে।
বাংলা শস্য বীমা যোজনা (bangla sasya bima yojana) কী? এই বাংলা শস্য বীমা যোজনায় আবেদনের শেষ তারিখ কবে, ফসল নষ্ট হলে ফসলের কতো শতাংশ টাকা ফেরত পাবেন, কবে থেকে টাকা পাবেন ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলি আলোচনা করতে চলেছি। এই বীমা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে নিন-
বাংলা শস্য বীমা কি?
বাংলা শস্য বীমা এই নামটি শুনেই বোঝা যাচ্ছে এটি একপ্রকার বীমা (Insurance)। প্রাকৃতিক দুর্যোগের (খরা, বন্যা, ভূমিকম্প, ঝড়) কারণে ফসল চাষীদের ফসলের ৭৫ শতাংশ ক্ষতি হলে ক্ষতিপূরণ পাবেন। এর জন্য চাষীদের AICIL এ আবেদন করতে হবে।
কারা আবেদন করতে পারবেন?
প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসলের ৭৫ ভাগ নষ্ট হলে এবং আবেদনকারীর নামে চাষ যোগ্য জমি থাকলে কৃষকেরা
এই প্রকল্পের সুবিধা নিতে পারবেন। একই পরিবারের বিভিন্ন সদস্যের নামে জমি থাকলে তারা সকলেই আবেদন করতে পারেন।
এই বীমার মাধ্যমে কত টাকা পাওয়া যায়?
এই প্রকল্পে আবেদনকারীর সমস্ত তথ্য যাচাই করে ক্ষতির পরিমাণ অনুযায়ী পঞ্চাশ হাজার টাকা থেকে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়।
আবেদন করবেন কিভাবে?
বাংলা শস্য বীমা প্রকল্পে আবেদন করতে হলে নিকটবর্তী ব্লক অফিস অথবা জেলা কৃষি অধিকর্তার অফিসে গিয়ে আবেদন করতে হবে।সেখানে গিয়ে আবেদন পত্র সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস সহযোগে ফর্মটি ভালোভাবে পূরণ করুন এবং সংশ্লিষ্ট অফিসে গিয়ে জমা দিতে হবে।
এই বীমায় কত বার আবেদন করা যাবে?
এই প্রকল্পে সুবিধা নিতে চাইলে আবেদননকারীকে বছরে দুইবার আবেদন করতে হবে। খারিফ ফসলের জন্য জুন-জুলাই মাসে এবং রবি ফসলের জন্য ডিসেম্বর- জানুয়ারী মাসে এই প্রকল্পে নাম নথিভুক্ত করতে হবে।
এই বীমায় কত প্রিমিয়াম দিতে হয়?
এই বীমায় নাম রেজিষ্ট্রেশন করার জন্য পাঁচ বছরে একবার বা প্রতি বছর হিসেবে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা প্রিমিয়াম হিসেবে জমা করতে হয়। তবে বাংলা শস্য বীমায় নাম নথিভুক্তের সময় রাজ্য সরকার প্রিমিয়ামের পুরো টাকা কোম্পানিকে দিয়ে থাকে। অর্থাৎ আপনি ফ্রী তেই এই প্রকল্পে নাম নথিভুক্ত করতে পারবেন। কিছু বানিজ্যিক ফসল যেমন আলু, আখ, আখরোট ইত্যাদির জন্য রাজ্য সরকার কিছু টাকা এবং আপনাকে আংশিক টাকা প্রিমিয়াম হিসেবে দিতে হবে।
পিএম কিষাণ/কৃষক বন্ধু প্রকল্পে নাম নথিভুক্ত থাকলে এই প্রকল্পে আবেদন করা যাবে কি?
যেহেতু এটি কোনো সরকারি যোজনা নয় তাই প্রধানমন্ত্রী কৃষি সন্মান নিধি কিম্বা কৃষক বন্ধু প্রকল্পে নাম নথিভুক্ত থাকলেও এই প্রকল্পের জন্য আবেদন জানাতে পারবেন। তবে অনেক আবেদনকারী অভিযোগ করেন যে তারা টাকা পাচ্ছেন না। এর কারন হল ফসলের ৭৫ শতাংশ ক্ষতি হলে তবেই ক্ষতিপূরণের টাকা পাবেন নচেৎ নয়। ফসল ক্ষতির ভাগ স্যাটেলাইটের মাধ্যমে কোম্পানি পর্যবেক্ষণ করেন।
আপনি bangla sasya bima yojana লাভ পেয়েছেন কি বা এই বীমা লাভ পাওয়ার জন্য কোন দিন আবেদন করেছিলেন কি?যদি আবেদন না করে থাকেন তাহলে আর দেরি না করে এই প্রকল্পে আবেদন করে এর সুবিধা উপভোগ করুন।