Hooghly historical places : পশ্চিমবঙ্গের মানচিত্রে একটি খুবই আকর্ষণীয় জায়গা হল হুগলি জেলা। এই হুগলি জেলার সদর দপ্তর হল চুঁচুড়া। হোগলা শব্দটি থেকে হুগলি জেলার নামকরণ করা হয়েছে। বহুদিন আগে গঙ্গার তীরবর্তী নিচু এলাকায় হোগলা চাষ হতো আর সেই কারণেই হুগলি জেলার এমন নামকরণ করা হয়েছে বলে মনে করা হয়। বর্ধমান জেলার দক্ষিণাংশকে বিচ্ছিন্ন করে ১৭৯৫ সালে ইংরেজরা, প্রশাসনিক কারণবশত হুগলি জেলার সৃষ্টি করেছিল। প্রথমদিকে হাওড়া হুগলি জেলারই অংশ ছিল।
Best 5 Hooghly historical places
আজকে আমরা এই হুগলি জেলার কি কি দর্শনীয় স্থান রয়েছে সেগুলি সম্পর্কে আলোচনা করব। যে দর্শনীয় স্থান গুলিতে কলকাতা থেকে একদিনে ঘুরে আস্তে পারেন।
১) ব্যান্ডেল চার্চ (Bandel church)
হুগলি জেলার অন্যতম দর্শনীয় স্থান হল ব্যান্ডেল চার্চ। ১৫৯৯ খ্রিস্টাব্দে হুগলি নদীর তীরে তৈরি হয়েছিল একটি কাঠের গির্জা। যার নাম ছিল নোসা সেনহোরা দো রোজারিও। এই গির্জাটি বর্তমান কালের ব্যান্ডেল চার্চ। বড়দিন থেকে ফার্স্ট জানুয়ারির ছুটির সময় এখানে বহুদর্শনার্থীরা আসেন। শিয়ালদহ বা হাওড়া থেকে ট্রেনে চেপে ব্যান্ডেল স্টেশনে নামতে হবে। এই ব্যান্ডেল স্টেশন থেকে রিক্সা বা অটো কিংবা হেঁটে ই যাওয়া যেতে পারে এই ব্যান্ডেল চার্চে।
ব্যান্ডেল স্টেশন থেকে প্রায় দু কিলোমিটার দূরে রয়েছে এই চার্চটি। এছাড়াও শিয়ালদা নৈহাটি লোকাল ধরে নৈহাটিতে নেমে ব্যান্ডেল লোকাল ধরে হুগলি ঘাট স্টেশনে নামুন সেখান থেকে অটো পেয়ে যাবেন অথবা নৈহাটির ফেরিঘাট থেকে লঞ্চে উঠে গঙ্গার ওপারে চলে যান চুঁচুড়া ফেরিঘাটে। সেখান থেকে আপনি অটো রিক্সা পেয়ে যাবেন।
২) তারকেশ্বর মন্দির (Taraknath Temple)
মহাদেবের যে কটি তীর্থস্থান রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হল তারকেশ্বর। এই তারকেশ্বর মন্দিরে সারা বছরই প্রায় ভিড় থাকে। আবার শিবরাত্রি, চৈত্র সংক্রান্তি, শ্রাবণ মাস এর সোমবারগুলিতে এই মন্দিরের তিল ধারণের জায়গা থাকে না। তারকেশ্বরে মহাদেবের নাম তারকনাথ। মন্দির প্রাঙ্গনে একটি পুকুর আছে, ওই পুকুরটি দুধ পুকুর নামে পরিচিত। ওই পুকুরে ভক্তরা স্নান করে বাবার কাছে মনস্কামনা জানায়। হাওড়া থেকে তারকেশ্বর লোকাল ট্রেনে চেপে তারকেশ্বর স্টেশনে নেমে সেখান থেকে হেঁটে বা রিক্সা করে মন্দিরে খুব সহজেই পৌঁছানো যায়।
৩) কামারপুকুর (Kamarpukur)
কামারপুকুর শ্রীরামকৃষ্ণের জন্মস্থান হিসেবে প্রসিদ্ধ লাভ করেছে। ছোটখাটো বেড়ানোর ট্রিপ হিসেবে বহু মানুষ এই কামারপুকুর কে বেছে নেন। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের বাস-ঘর, রঘুবীরের মন্দির, বৈঠকখানা ও আম গাছ, যোগী এর শিব মন্দির, হালদার পুকুর প্রভৃতি দর্শনীয় স্থান রয়েছে কামারপুকুরে। এই জায়গাগুলি নিজেরাও ঘুরতে পারেন আবার জায়গাগুলি ঘোরার জন্য গাইডের সাহায্য নিতে পারেন। জায়গাগুলি দেখানোর জন্য গাইড আপনার কাছে ৫০ থেকে ১০০ টাকা মূল্য নেবে। কামারপুকুরে কোনো নির্দিষ্ট স্টেশন নেই। তাই হাওড়া থেকে তারকেশ্বরে নেমে গাড়িতে করে যেতে হয় কামারপুকুর। কামারপুকুর যেতে প্রায় ঘন্টা তিন সময় লাগবে হাওড়া থেকে।
৪) হংসেশ্বরী মন্দির (Shri Hanseshwari Temple)
হুগলি জেলার আরেকটি নামকরা মন্দির হল হংসেশ্বরী মন্দির ও অনন্ত বসু দেব মন্দির। এই মন্দিরের দেবী হংসেশ্বরী মহাদেবের নাভি থেকে বেরিয়ে আসা বৃন্তসহ পদ্মের ওপর অধিষ্ঠিত আছেন। এই মন্দিরগুলিতেই নিচে থেকে উপরে মোট ১৪ টি শিবলিঙ্গ রয়েছে। এই মন্দিরটি প্রায় ষাট ফুট উঁচু। এই মন্দিরের ১৩ টি চূড়া রয়েছে। এই চূড়া গুলি দেখতে না ফোটা পদ্ম ফুলের কুঁড়ির মত। রাজা নৃসিংহ দেব ১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে এই মন্দির তৈরির জন্য নির্মাণ কাজ শুরু করেন।
হাওড়া থেকে ট্রেনে করে কাটোয়া ব্যান্ডেল লাইনের বাঁশবেড়িয়া স্টেশনে নেমে সেখান থেকে রিক্সা করলেই ৫ মিনিটে পৌঁছানো যাবে হংসেশ্বরী মন্দিরে। এছাড়াও শিয়ালদা নৈহাটি লোকাল ধরে নৈহাটিতে নেমে ব্যান্ডেল লোকাল ধরে হুগলি ঘাট স্টেশনে নামুন সেখান থেকে অটো পেয়ে যাবেন অথবা নৈহাটির ফেরিঘাট থেকে লঞ্চে উঠে গঙ্গার ওপারে চলে যান চুঁচুড়া ফেরিঘাটে। সেখান থেকে আপনি অটো রিক্সা পেয়ে যাবেন।
৫) হুগলির ইমামবাড়া (Hooghly Imambara)
হুগলির অন্যতম দর্শনীয় স্থান হল ইমামবাড়া। এই দোতলা বাড়িটিতে অনেক কৃত্তিম ঝর্ণা, জলাশয় এবং ত্রিভুজ আকৃতির অঙ্গন আছে। ইমামবাড়ায় দুটি ৮৫ মিটার উঁচু মিনার আছে। এই মিনার দুটি পুরুষ এবং মহিলাদের ব্যবহারের জন্য সংরক্ষিত রয়েছে। ইমাম বাড়ার মিনারে মস্ত বড় একটি ঘড়ি রয়েছে। ওই ঘড়ির যন্ত্রপাতি ও ঘন্টা আছে নিচের তলাগুলিতে। প্রতি ১৫ মিনিট অন্তর অন্তর ওই ঘন্টার ধ্বনি মানুষের কানে পৌঁছাবে। আর প্রতি ঘন্টায় ওই ঘড়িটি জোরে বেজে ওঠে।
হাওড়া থেকে ট্রেনে করে হুগলি স্টেশনে নেমে সেখান থেকে রিক্সা করে সহজেই ইমামবাড়া পৌঁছানো যায়। এছাড়াও শিয়ালদা নৈহাটি লোকাল ধরে নৈহাটিতে নেমে ব্যান্ডেল লোকাল ধরে হুগলি ঘাট স্টেশনে নামুন সেখান থেকে অটো পেয়ে যাবেন অথবা নৈহাটির ফেরিঘাট থেকে লঞ্চে উঠে গঙ্গার ওপারে চলে যান চুঁচুড়া ফেরিঘাটে। সেখান থেকে আপনি অটো রিক্সা পেয়ে যাবেন।