বিয়ের আগে শারীরিক সম্পর্কে সুখ পেলে তবেই বিয়ে হয়, ভারতের এই রাজ্যে!

আমাদের দেশে বিয়ে একটি সামাজিক বন্ধন।যা একটি ছেলে ও মেয়েকে সামাজিক ও ধর্মীয়ভাবে সম্পর্কে আবদ্ধ করে।আর বিয়ের স্বামী স্ত্রী শারীরিক সম্পর্ক হবে এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু বিয়ের আগে শারীরিক সম্পর্ক হলে আমাদের সমাজে অনেকেই সেটাকে খুব খারাপ নজরে দেখে।আসলে সামাজিক কারণে বিয়ের আগে শারীরিক সম্পর্ক নিয়ে মানুষের মনে কিছুটা হলেও কিন্তু কিন্তু রয়েছে।
বিয়ের আগে শারীরিক সম্পর্ককে অনেকে পাপ বলে মনে করেন। আর তাছাড়া সমাজে এক সাথে চলতে গেলে সমাজের কিছু রীতিনীতি মেনে চলতেই হয়। বিয়ের আগে শারীরিক সম্পর্ক নারীদের ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিতে পারে। তাদের জীবনে নানা মারাত্মক সমস্যা ডেকে আনতে পারে।এমনকী শারীরিক ঘনিষ্ঠতা নিয়ে কথা বলতেও মানুষ সাধারণত ভয় পেয়ে থাকেন।
আমাদের সমাজে এমন অনেক পুরুষ আছেন যারা শুধুমাত্র নারীদেহ ভোগ করার উদ্দেশ্যেই প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। কাজ হাসিল হয়ে গেলে সম্পর্কের দায়ভার নিতে চান না। এর ফলে বিয়ের আগে শারীরিক সম্পর্কের কারনে সমস্যা সৃষ্টি হলে তার ভোগান্তি পোহাতে হয় নারীদেরকেই।তাই স্বাভাবিক ভাবেই বিয়ের আগে শারীরিক সম্পর্ক মেনে নিতে পারেন না।
বর্তমানে সমাজে নারী এবং পুরুষের সমানাধিকার নিয়ে অনেকেই সরব।কিন্তু প্রকৃত অর্থে নারী-পুরুষকে সমানাধিকার দিতে পারে হাতেগোনা কয়েকজনই।তবে বাইসন হর্ন মারিয়ার সমাজে নারীরা বছরের পর বছর ধরে পুরুষের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছেন। এই সমাজের মানুষজন একটি বিষয়ে এগিয়ে রয়েছেন সেটা হল মানসিকতা।
আমাদের দেশে যেখানে বিয়ের আগে শারীরিক সম্পর্ককে পাপ বলে মনে করা হয়,সেখানে এই জনগোষ্ঠীর মানুষের কাছে বিয়ের আগে নারী এবং পুরুষের মধ্যে যৌন সম্পর্ক গড়ে ওঠা আবশ্যক।বাইসন হর্ন মারিয়ার সমাজে এটাই স্বাভাবিক নিয়ম।বিয়ের আগে পুরুষ বা নারী যদি শারীরিক সম্পর্কে খুশি হন, তবেই তারা বিয়ে করবেন।
ভারতের ছত্তীসগঢ়ের আদি জনগোষ্ঠী ‘গোল্ড’। তাদের এক অংশের নাম বাইসন হর্ন মারিয়া।তাদের পুঁথিগত শিক্ষা নেই।বেশভূষায় নেই তথাকথিত ‘সভ্য’ সমাজের ছাপ। তাদের জীবন যাপনও অত্যন্ত সরল। ‘বাইসন হর্ন মারিয়া’ নামেই তাদের ডাকা হয়। মাথায় বাইসনের শিং দিয়ে বানানো সজ্জার জন্যই এমন নামকরণ হয়েছে এই জনগোষ্ঠীটির।এক সময় ইংরেজরা নাকি এই নাম দিয়েছিল।
এখন অবশ্য অনেকে বন মহিষের বদলে হরিণ বা অন্য কোনও প্রাণীর শিং ব্যবহার করেন। কিন্তু নাম একই থেকে গেছে।ছত্তীসগঢ়ের জগদলপুরে এই জনগোষ্ঠীর বাস। তাদের বিশ্বাস বিয়ের আগে নারী এবং পুরুষের মধ্যে যৌন সম্পর্ক গড়ে ওঠা আবশ্যক। এর মাধ্যমেই নাকি পরবর্তীকালে দাম্পত্যের বন্ধন আরও অটুট হয়। পুরুষ বা নারী যদি সেই সম্পর্কে খুশি না থাকেন, সেক্ষেত্রে যে কোনও সময় তারা সেই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন।
নারী পুরুষ যদি একে অপরের মধ্যে যৌন সম্পর্ক স্থাপনে খুশি হলে তবে তাদের বিয়ে দেওয়া হয়। আবার বিয়ের পরও যদি কারও অন্য কোনও নারী বা পুরুষকে ভাল লাগে, তখনও বিনা বাধায় দাম্পত্য ভেঙে বেরিয়ে আসার স্বাধীনতাও রয়েছে তাদের।কারন এই জনগোষ্ঠীর মানুষ মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন, ভালবাসা না থাকলে সেই সম্পর্ক ধরে রাখার কোনও অর্থই নেই।
তাই যে কোনও সময় তাঁরা বিনা বাধায় সেই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন।আর এক সঙ্গীকে ছেড়ে অন্য সঙ্গী বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা নারী-পুরুষ উভয়েরই রয়েছে। যৌনতার এক স্বাধীনতা আছে এই জনজাতির মধ্যে।বিয়ের আগে যৌন সম্পর্কে কোনও নারীর সন্তান হলে, তাকেও খুব স্বাভাবিক ভাবেই পুরো পরিবার আপন করে নেয়।
তবে এখানেই শেষ নয়। কোনও নারীর স্বামীর মৃত্যু হলে শ্বশুরবাড়ির লোকেরাই তার জন্য পাত্র খোঁজেন। এমনকি জমকালো বিধবা বিবাহের আয়োজন করা হয়। তাদের আবার এক ধরনের বিশেষ উৎসবও রয়েছে। যেখানে ঊর্ধ্বাঙ্গ অনাবৃত অবস্থায় পুরুষ ও মহিলারা উল্লাসে মাতেন। তারা একে অপরকে নানা বিদ্রুপও করেন। তবে তা কখনও মাত্রা ছাড়িয়ে যায় না। তাদের সমাজে সভ্যতার মাপকাঠি একেবারে অন্যরকম।
এখনও এই জনগোষ্ঠী এইসব নিয়ম মেনে চলে।১৯৩৮ সালে প্রকাশিত ব্রিটিশ আমলা ডাব্লিউভি গ্রিগসনের বইয়ের সূত্র ধরে সম্প্রতি এই জনগোষ্ঠীকে নিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।গ্রিগসনের লেখা ‘দ্য মারিয়া গোন্ডস অব বস্তার’ দীর্ঘ দিন ধরে বিশ্বের নামী বিশ্ববিদ্যালগুলোর পাঠ্যক্রমে রয়েছে।আর সেই বই যাচাই করে দেখা গেছে এখনও এই জনগোষ্ঠী সেইসব নিয়ম মেনে চলে।
তবে এই জনগোষ্ঠীর কথা যত ছড়িয়েছে তাদের জীবনযাত্রা দেখতে পর্যটকদের ভিড় বেড়েছে।তাই বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা ক্রমশ শহুরে সভ্যতা ও বিদেশি পর্যটকদের ভিড় এই জনগোষ্ঠীর মানুষের মনের মধ্যে অন্য রকম প্রভাব ফেলতে পারে।যত দিন যাচ্ছে এই জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার কথা ততই চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে।
সত্যি বর্তমান ‘সভ্য’ এবং ‘শিক্ষিত’ সমাজের মানুষের থেকে এই জনগোষ্ঠীর মানুষজন মানসিকতার দিক থেকে অনেক এগিয়ে রয়েছেন।
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা